করোনা পরিস্থিতিতে দেশ, সারা বিশ্ব যখন স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অফিস আদালতসহ দেশের উৎপাদনের চাঁকা। সারাদেশে চলছে সরকারী সাধারণ ছুটি। লকডাউন হয়ে গেছে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা। করোনাভাইরাস সংক্রামণ থেকে বাঁচতে সরকার লোকজনকে ঘরে থাকার জন্য বলছে। সামজিক দুরত্ব বজায় রেখে জরুরী কাজকর্ম করার নির্দেশনা রয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে ব্যবসা-বানিজ্য, কল-কারখানা, মার্কেট, দোকানপাট। কাজ হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। এক প্রকার থমকে গেছে দেশ। আর এর বাইরে নয় পিরোজপুরও।
পিরোজপুর জেলায় গত ১৬ এপিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছে জেলার হাজার হাজার মানুস। নি¤œ আয়ের লোকজনের পাশাপশি ভাল নেই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনও।
করোনা দুর্যোগ পরিস্থিতিতে মানুষের এই দু:সময়ে পাশে রয়েছেন পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর-নাজিরপুর-স্বরূপকাঠী) আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম। তিনি করোনা ঝুঁকির মধ্যে পিরোজপুরে ছুটে এসেছেন।
তিনি ২১ এপ্রিল পিরোজপুরে এসে পিরোজপুরের করোনা পরিস্থিতিসহ অসহায় মানুষদের জন্য করনীয় নিয়ে বৈঠক করছেন সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে। বৈঠক করেছেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে। তার নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি উপজেলায় ছুটে যাচ্ছেন। সেখানে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে বৈঠক করছেন। বর্তমান দুর্যোগ মোকাবেলা এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সরকারের সহায়তা কার্যক্রমের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে। অসহায় মানুষদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। খোঁজ খবর নিচ্ছেন সরকারী ত্রাণ তৎপরতার। তাদের দিচ্ছেন নানা দিক নির্দেশনা।
পাশাপাশ তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার নির্বাচনী এলাকার পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলায় কর্মহীন নিম্ন আয়ের মানুষ, নিম্ন মধ্যবিত্তসহ বর্তমান পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়া বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের খাদ্য সহায়তা ও অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন। করোনা সংক্রমণ এড়াতে লকডাউন মেনে চলার আহবান জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষকে।
দুর্যোগময় অবস্থায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য পিরোজপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের পিপিই প্রদান করেছেন। আইনজীবী ও সাংবাদিকদের দিয়েছেন অনুদান।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়েছেন। পিরোজপুরের বিভিন্ন সড়কে জীবাণুনাশক স্প্রে করা, জনসাধারণের মাঝে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণ করেছেন। বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
করোনা পরিস্থিতির শুরুতে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম এমপি ব্যক্তিগত অর্থায়নে পিরোজপুর-১ আসনের তিন উপজেলায় ১০ হাজার কর্মহীন ও অসহায় পরিবারকে চাল, ডাল, তেল, আলু, সাবানসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী প্রদান করেছেন। পিরোজপুরে কর্মহীন হয়ে পড়া বাস চালক, শ্রমিকসহ গণপরিবহনের শ্রমিক-কর্মচারীদের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন।
২৩ এপ্রিল খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন পিরোজপুর শহরের কামার, কুমার, তাঁতী, জেলে, হরিজন (মুচি, মেথর, ডোম), নরসুন্দর (নাপিত, ক্ষৌরকার, পরামানিক), রজকদাস (ধোপা), শাঁখারী (শাঁখা প্রস্তুতকারী), সৎকারকর্মী (চন্ডাল), হরিদাস, ঋষি (চর্মকার), স্বর্ণকার কারিগরসহ ১১ ধরণের পেশায় নিয়োজিত কর্মজীবিদের।
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ব্যক্তিগত অর্থায়নে পিরোজপুর-১ আসনের কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষ, মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত ১৫ হাজার পরিবারকে ইফতার ও খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। এসব পরিবারের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী হিসেবে ৫ কেজি চাল, ১ কেজি ছোলা বুট, ১ কেজি চিড়া, আধা লিটার তেল, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি আলু পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানান খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের সমন্বয়কারী পিরোজপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এস এম বায়েজিদ।
এস এম বায়েজিদ জানান, করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম পিরোজপুরের মানুষরে খোঁজ খবর নিয়ে আসছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে মন্ত্রী মহোদয় জীবনের ঝঁকি নিয়ে পিরোজপুরে ছুটে এসে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। করোনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সর্বসাধারণকে আহবান জানাচ্ছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর নির্দেশনা দিচ্ছেন। সরকারী সাহায্য-সহযোগিতা যাতে অভাবী ও কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষজন পায় সে বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অসহায় মানুষদের মাঝে খাদ্য সহায়তা করে চলছেন। করোনা পরিস্থিতির উত্তেরণ না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রী মহোদয়ের এ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, করোনা সংকট মোকাবেলায় বিশে^র অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি ভালো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সহযোগিতার জন্য যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার মাধ্যমে আগামী তিন বছর মানুষের কল্যাণ করা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকতে দেশের একজন মানুষও অনাহারে থাকবে না। সরকারের দেয়া খাদ্য সহায়তা ও ত্রাণ সামগ্রী প্রদানের পাশাপাশি এই দুর্যোগময় সময়ে তিনি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে অসহায় মানুষদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করে চলছেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদেরও সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে কৃষি উৎপাদন, হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল পালন অব্যহত রাখতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকারের গৃহীত কর্মসূচিও সফল করা অপরিহার্য।
আজ- শনিবার, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ