আজ- শনিবার, ২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

spot_img

নাজিরপুরে এসএসসি’র ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার প্রায় সব কয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফরম পূরণের সময় অন্য কোনো ফি আদায় করা যাবে না সরকারি এমন নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে নাজিরপুর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত দু’মাস আগে যোগদানকারী প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে ৫ হাজার টাকা করে নিয়ে ২ হাজার টাকার রশিদ দিয়েছেন। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবক ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এম খোকন কাজী শনিবার দুপুরে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এ অনিয়ম সংক্রান্তে একটি পোস্ট দিলে উপজেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

তিনি তার পোস্টে লিখেছেন, ‘এই অনিয়ম ও দূর্নীতির শেষ কোথায়, নাজিরপুর বালিকা বিদ্যালয়ে এটা কি হচ্ছে ? কর্তৃপক্ষ নিরব দর্শকের সারিতে! এই দূর্নীতি রোধ করার জন্য কতইনা আন্দোলন করেছি, (ফ্যাক্ট এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কৌশলে ফেল করিয়ে ফরম পুরণ করার জন্য ৫ হাজার টাকা নিয়ে ২ হাজার টাকার রশিদ অভিভাবকের হাতে তুলে দিচ্ছে, গণিত শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে ওই ছাত্রী যতই ভাল করুক, সেই ছাত্রীকে ফেল করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আসলে কারণ টা কি জানার অধিকার সকলেরই আছে।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টের আদেশ, শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কেন্দ্র ও ব্যবহারিক ফি’সহ মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ১৮৫০ টাকা ও বিজ্ঞান শাখায় ১৯৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সিরাজুল হক সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা, হাজী গণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫শ’ টাকা, কলারদোয়ানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ৪ হাজার, মুগারঝোর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫ শ’ টাকা। একইভাবে উপজেলা প্রায় সব কয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ফরম পূরণের নামে অতিরিক্ত আদায়কৃত অর্থের কোনো রশিদ দিচ্ছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

নাজিরপুর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবক নুরুল ইসলাম মৃধা বলেন, আমার স্ত্রীকে মেয়ে ফরম পুরণের জন্য বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম তার কাছে ৫ হাজার টাকা নিয়ে ২ হাজার টাকার রশিদ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সামসুদ্দিন নামের এক অভিভাবক বলেন, আমরা সন্তান নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সব সময় জিম্মি থাকি। সরকারি কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যখন তখন আমাদের ওপর বিভিন্ন ফি চাপিয়ে দেয়া হয়। সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায় এসব নিয়ে কখনো মুখ খুলতে পারি না।

নাজিরপুর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কোচিং ফি বাবদ এ টাকা নেয়া হয়েছে। তাছাড়া কমিটির সেটা ধার্য্য করে দিয়েছে আমরা তাই নিয়েছি।

নাজিরপুর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারেফ হোসেন খান বলেন, ৫ হাজার টাকা করে নেয়ার ব্যাপারটি আমার জানা নেই। তবে বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের জন্য ৩ হাজার ৩শ’ এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৩ হাজার ৪শ’ টাকা আমরা ধার্য্য করে দিয়েছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মাহিদুল ইসলাম ফরম পুরণের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে বলেন, উপজেলার অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়েই অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে। অনেক অভিভাবকই মৌখিকভাবে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। হাজী গণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ভ্যানচালক পিতা ২ হাজার টাকা নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলে তিনি ওই ছাত্রের ফরম পুরণ করেনি। তার কাছে ৪ হাজার ৫ টাকা দাবী করা হয়। ওই ভ্যান চালক আমার কাছে এসে অভিযোগ করলে আমি পকেট থেকে তাকে ২ হাজার ৫ শ’ টাকা দিয়েছি। পরে সে ৪ হাজার ৫ শ’ টাকা দিয়েই ফরম পুরণ করেছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles