আজ- বৃহস্পতিবার, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় শিশু কন্যাসহ দম্পতিকে হত্যা

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় শিশু কন্যাসহ একই পরিবারের তিনজনকে হত্যার পর লাশ ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা । বৃহস্পতিবার দিনগত গভীর রাতে উপজেলার ধানীসাফা ইউনিয়নের ধানীসাফা গ্রামে এ নির্মম হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। পুলিশ আজ শুক্রবার দুপুরে নিহত তিন জনের ঝুলন্ত লাশ বসতঘর থেকে উদ্ধার করেছে।
নিহতরা হলেন গৃহকর্তা অটোচালক মো. আয়নাল হক (৩২) তার স্ত্রী আমেনা বেগম খুকুমণি (২৬) তাদের একমাত্র কণ্যা আশফিয়া (৩) ।
নিহত আয়নাল হক হাওলাদার উপজেলা ধানীসাফা গ্রামের রত্তন হাওলাদার মেঝ ছেলে। সে ভাড়ায় অটো চালিয়ে একটি ভাড়া বাসায় থেকে জীবিকা নির্বাহী করতো । কি কারনে এই নির্মম হত্যাকা- তার কোনও রহস্য পুলিশ ও গ্রামবাসি উদঘাটন করতে পারেনি। এ তিন খুনের ঘটনা দ্রুত তদন্তে আইনশৃংখলাবাহিনীর তিনটি সংস্থা সিআইডি এর ছয় সদস্য , পিবিআই এর নয় সদস্য ,র‌্যাব ও ডিবির একদল গোয়েন্দা হত্যার রহস্য উদঘাটনে ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
পুলিশ ্এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিহত অটোচালক আয়নাল হকের আপন বড় ভাই হেলাল হাওলাদার (৮০), প্রতিবেশী চাচা মালেক হাওলাদার (৫২), চাচাত ভাই বেল্লাল হাওলাদার (৪৫) ও একই গ্রামের মাহবুব হাওলাদার (১৮)কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে ।

সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, উপজেলার ধানীসাফা গ্রামের অটোচালক মোঃ আয়নাল হক হাওলাদার নিজ ইউনিয়ন ধানীসাফা বাজারের কাছে সড়কের পাশে একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী খুকু মণি ও তাদের তিনবছর বয়সী একমাত্র কণ্যা আসফিয়াকে নিয়ে বসবাস করতো। গত পাঁচ মাস আগে ওই ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস করে আসছিলো। বৃহস্পতিবার দিনভর আয়নাল অটোচালিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। রাতের আহার শেষে পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে পড়েন। গভীর রাতে অজ্ঞাত একদল দুর্বৃত্ত ঘরের মেঝের সিদ কেটে ভিতরে প্রবেশ করে। এরপর দুর্বৃত্তরা পরিবারের গৃহকর্তা, তার স্ত্রী ও একমাত্র শিশু কণ্যাকে হত্যা করে। পরে লাশের হাত পা বেঁধে ঘরের আড়ার সাথে লাশ ঝুলিয়ে রেখে ঘরের মালামাল তছনছ করে পালিয়ে যায়।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নিকট প্রতিবেশী চাচাত বোন মহিমা খাতুন(১৫) ওই বাড়িতে যায় । এসময় সে ডাকাডাকি করে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দরোজায় ধাক্কা দিলে দরোজা খুলে যায়। এরপর তিন জনের লাশ ঝুলতে দেখে সে চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসে । পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার করে ময়ণাতদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠায়।

নিহত আয়নালের বড় বোন দুলীয়া বেগম(৩৮) বলেন, আমার ভাইয়ের তেমন কোন শত্রু ছিলোনা । তবে আট বছর আগে চাচাত চাচা মালেক হাওলাদার এর কাছ থেকে পাঁচকাঠা জমি ক্রয় করলেও জমিতে দখল পাননি আমার ভাই। এ নিয়ে তার বিরোধ ছিলো। আমার ভ্ইায়ের পুরো পরিবারটিকে এভাবে কারা হত্যা করলো। আপনেরা বিচার করেন।
নিহত আয়নাল এর স্ত্রীর চাচা আব্দুল মান্নান (৪০) জানান, আয়নালের পরিবার ভাড়া বাসায় থাকতো। বাসাটি তেমন নিরাপদ ছিলোনা বলে তাদেও কিছু স্বর্ণালংকার বাসার মালিক মোজাম্মেল হোসেন এর স্ত্রী হাওয়া বেগমের কাছে নিরাপত্তার জন্য গচ্ছিত রাখা ছিলো। ঈদ উপলক্ষে ওই স্বর্ণালংকার গতবুধবার বাসায় নিয়ে আসে। এরপরই বৃহস্পতিবার রাতে এই মর্মান্তিক হত্যাকা- ঘটে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে মঠবাড়িয়া অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুদুজ্জামান মিলু বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে একই পরিবারের তিনজনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এটি কোনো আত্মহত্যার ঘটনা নয়। পরিকল্পিত হত্যাকা- । হত্যার রহস্য উদঘাটনে চারটি গোয়েন্দা সংস্থা কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের এর প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে খবর পেয়ে পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহনেওয়াজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন । তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এঘটনার কারন বলা যাচ্ছেনা। এ বিষয়ে চারটি বিশেষ তদন্তদল কাজ শুরু করেছে।

বিভাগ: অন্যান্য,জাতীয়,টপ নিউজ,বরিশাল বিভাগ,ব্রেকিং নিউজ,মিডিয়া,লাইফস্টাইল,সারাদেশ