আজ- রবিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

spot_img

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠীতে তৈরি হচ্ছে জাহাজ

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলায় আসলে একটু আবাকই হবে। এ উপজেলার নদীর পাড়ে বিভিন্ন স্থানে দেখা যাবে নানা আকৃতির ছোট বড় জাহাজ। কোনোটি পূর্নাঙ্গ আবার কোনোটি তৈরিতে ব্যস্থ শ্রমিকরা। একটি উপজেলার নানা স্থানে তৈরি হচ্ছে নতুন জাহাজ এ দৃশ্য অবাক করার মতই। স্বরূপকাঠী বানিজ্য সমৃদ্ধ একটি উপজেলা। কাঠ ব্যবসার জন্য দেশের মানুষের কাছে পরিচিত স্বরুপকাঠী। বর্তমানে এ উপজেলার বিভিন্ন ডকইয়ার্ডে তৈরি হচ্ছে আধুনিক মানের জাহাজ। এসব ডকইয়ার্ডে তৈরির পাশাপাশি মেরামতও হচ্ছে জাহাজ।

জানা যায়, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী একটি নদী বেষ্টিত বানিজ্য সমৃদ্ধ এলাকা।পেয়ারা,কাঠ ব্যবসা ও নার্সারির জন্য বিখ্যাত স্বরূপকাঠী। নদী-খাল বেষ্টিত হওয়ায় এ সব পন্য পরিবহনে প্রচীনকাল থেকে স্থানীয়রা নৌকার উপর নির্ভরশীল।ধীরে ধীরে কাঠের নৌকার পাশাপাশি ইঞ্জিন চালিত স্টিলের ট্রলার ব্যবহার শুরু করে।এ সব ট্রলার মেরামত ও তৈরির জন্য গড়ে ওঠে ডকইয়ার্ড। সময়ের ব্যবধানে এসব ডকইয়ার্ডে তৈরি হচ্ছে ছোট বড় জাহাজ। বানানো হচ্ছে লঞ্চ,উন্নতমানের ট্রলারসহ নানা নৌযান। বর্তমানে এখানকার ডকইয়ার্ডে উপজেলার বিপুল জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি এটি রুপ নিয়েছে সম্ভাবনাময় শিল্পে। স্বরূপকাঠীর বুক দিয়ে প্রবাহিত সন্ধ্যা নদীর তীর,সোহাগদল, কালিবাড়ি, বরইকাঠী, বালিহারী, তারাবুনিয়ার খালের তীরে গড়ে উঠেছে ছোট বড় ১৫ টির মত ডকইয়ার্ড। এ সব ডকইয়ার্ডে জাহাজ নির্মানের বিভিন্ন ধাপে যেমন সেটিং,কাটিং,ওয়েডিং,রংয়ের কাজে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো মানুষের।

ডকইয়ার্ড সংশিষ্টদের সাথে কথা বলে জানাযায়, এ সব ডকইয়ার্ডে এক টন ধারন ক্ষমতা থেকে শুরু করে ১ হাজার টন পর্যন্ত ধারণ ক্ষমতার কার্গো জাহাজ নির্মান করা হচ্ছে। এসব জাহাজের কোনটির দৈর্ঘ্য ২০০ ফুট পর্যন্ত। স্বরূপকাঠীর ডর্ক ইর্য়াড নির্মান ঠিকাদার ও এখানে তৈরি জাহাজ মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায় এসব ডর্ক ইয়ার্ডে ১ হাজার টন ধারন ক্ষমতার বড় জাহাজ তৈরি করতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ মাস এবং একটি জাহাজ তৈরি করে ঠিকাদারদের দেড় থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। স্বরূপকাঠীর ডর্ক ইয়ার্ড থেকে জাহাজ তৈরি করে সন্তুষ্ট জাহাজ মালিকরা। তাদের দাবি ঢাকার ডর্ক ইয়ার্ড থেকে এখানে একটি বড় জাহাজ নির্মান করলে তাদের ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা সাশ্রয় হয়। উপজেলার এসব ডর্ক ইয়ার্ডে কাজ করা শ্রমিকদের প্রতিদিনের বেতন প্রকার ভেদে ১৫০ থেকে ৫০০ শত টাকা পর্যন্ত।

ডর্ক ইয়ার্ড মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায় প্রায় ৪০ বছর আগ থেকে এ উপজেলায় জাহাজ নির্মান শিল্পের সূচনা হয়। আগে বিষয়টি জেলার বাইরে তেমন কেউ না জানলেও বর্তমান এখানে মান সম্পন্ন বড় মানের জাহাজ তৈরি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষদের কাছে পরিচিত ব্যাপক লাভ করেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে জাহাজ মালিকরা তাদের জাহাজ নির্মান ও মেরামত করতে আসছে। এখানে জাহাজ নির্মান শিল্পকে কেন্দ্র করে ওয়ার্কশপ, হার্ডওয়ার, স্টীল প্লেট, ওয়ালর্ডিং রড ও রং এর কারখানাসহ নানা ধরনের ছোট বড় সহ কারখানা গড়ে উঠেছে। এ সব কারখানায়ও ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। ডর্ক ইয়ার্ড মালিকরা আরও জানান জাহাজ নির্মানের কাঁচামাল আনা হয় ঢাকার পোস্তগোলা, চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী, কুমিরা, সীতাকুন্ডু থেকে এছাড়া কিছু কাঁচামাল বিদেশ থেকেও আমদানী করা হয়।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles