আজ- শনিবার, ২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

spot_img

ফোনে কোলকাতা থেকে|বাংলাদেশে পৈত্রিক ভিটায় হাসপাতাল করতে চায় নচিকেতা

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া বিহারী লাল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (অব) ললিত কুমার গাঙ্গলী ১৯৪৫-’৪৬ সালে বর্তমান ঝালকাঠীর কাঠালিয়া সদর উপজেলার চেঁচরীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং একই উপজেলার উত্তর আইনল (আনোইল) বুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা জামাতা সখা রঞ্জন চত্রবর্তী সহ স্বপরিবারে ভারতে চলে যান। সেখানেই বাবা সখারঞ্জন চক্রবর্তী এবং মা লতিকা রানী চত্রবর্তীর গর্ভে জন্ম নেন আজকের ভারতের বাস্তবমুখি প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। বরেণ্য এই সঙ্গীত শিল্পী বহুবার শেকড়েরর টানে মাতৃ- পিতৃ ভিটায় আসার জন্য চেষ্টা করেও নানা প্রতিকূলতার কারনে সফল হতে পারেননি। ললিত কুমার গাঙ্গুলী ছিলেন বরা কোঠার জমিদার। চেচরী রামপুরে প্রায় ৬০/৭০বিঘা সম্পত্তি ক্রয় করে বসবাস করতেন।
২০১৪ সালের ১৭ই নভেম্বর একটি চার্টার হেলিকপ্টারে করে দুপুর দের টায় তার দাদু ললিত কুমার গাঙ্গুলির কর্মস্থল ভা-ারিয়া বিহারী লাল পাইলট মাধ্যমিক মিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করার পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান,ওসি, হিন্দু,বৌদ্ধ,খৃষ্টাণ ঐক্য পরিষদের নের্তৃবৃন্দ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। পরে নচিকেতা দাদুর স্মৃতি বিজরিত স্কুলে বসেন,ঘুরে দেখেন এবং স্কুল বোর্ডে প্রধান শিক্ষকদের নামের তালিকায় দাদুর নাম দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। সেখান থেকে মামা বাড়ি ঝালকাঠী জেলার কাঠালিয়ার উপলোর চেঁচরী রামপুর গ্রামে যান নচিকেতা। তাকে দেখতে ভিড় জমায় জনপ্রতিনিধি,রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অসংখ্য মানুষ। মায়ের স্মৃতি বিজরীত স্থানে এখন একটি ভাঙা টিনের চালায় ঘর,সেই পুকুর দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে ধরে রাখতে পারেননি চোখের জল। কাঁদলেন নিজেও কাঁদালেন উপস্থিতিদেরও। পরে একটু স্বাভাবিক হয়ে স্থানীয় প্রবীণমনবীনদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। তখন ওই এলকার চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ফরাজীসহ একাধীক ব্যাক্তি নচিকেতাকে জানান, তার পূর্ব পুরুষের এখানে প্রায় ৬০বিঘা সম্পত্তি রয়েছে। যা জবরদখল করে বিভিন্ন লোকে ভোগ দখল করে।
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ এই সম্পত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে নচিকেতা ওই প্রান্তীক জনপদে তাদের সম্পত্তিতে সরকারি উদ্যোগে একটি হাসপাতাল তৈরী হলে সাধারন মানুষ স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারবে সহজে সে জন্য সরকারের প্রধান মন্ত্রীর গোচরে আনতে সাংবাদিকরে অনুরোধ করেছিলেন। সাংবাদিকরাও তাদের সংবাদে বিষয়টি ভৌগলিক অবস্থার দিক বিবেচনা করে তাদের লেখনির মাধ্যমে হাসপাতাল নির্মানে সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছিল। শুরুতে বেশ তৎপর দেখা দেলেও পরবর্তীতে তা থেকে যায় অধরা। যে নদীতে নৌ পথে তার মা-বাবা ঐতিহ্যবাহী ভা-ারিয়া আসা যাওয়া করত সে নদীর জল একটি মাম পানির বোতলে ভড়ে নিয়ে ওই দিন ই বিকেল সাড়ে তিনটায় একই হেলিকপ্টারে ঢাকায় ফেরেন এই বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী এবং তার সফর সঙ্গীরা। যাওয়ার আগে এ এলাকার সাংসদ তৎকালীন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপির সাথে মুঠোফোনে তাঁকে ধন্যবাদ জানান ।
মামার বাড়ি ত্যাগ করার সময় দেখা যায় নাতী নচিকেতা আসছে প্রবীণদের এমন কথা বলতে বলতে মানুষের ঢল নামতে শুরু করে। সে জন্য ওখানে সময় না দিয়ে ফের ভা-ারিয়া ফেরার পথে সড়ক লাগোয়া উপজেলা সদরের ৬৭নং নিজ ভা-ারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন এবং ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন।
এদিকে এবছরের ৮সেপ্টেম্বর ঝালকাঠী জেলার বাসিন্দা কবি কামিনি রায় কবি কামিনী রায় ও কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি সংরক্ষণ আন্দোলন পরিষদের সদস্য সচিব আ.ফ আজিম সহ কিছু উদ্যমী যুবক ভা-ারিয়ায় এসে ওই সময়ে যারা তার (নচিকেতার) সাথে ছিল তাদের মাধ্যমে নচিকেতার সাথে দেখা করার উপায় খুঁজতে থাকে। পরবর্তীতে স্থানীয় সাংবাদিক শঙ্কর জীৎ সমদ্দার মুঠো ফোনে নচিকেতা এবং তার প্রাইভেট সেক্রেটারি মুন্না দাদার সাথে কথা বলেন। জানান, এই যুবকরা নচিকেতার পৈত্রিক ভিটা উদ্ধার এবং তার ইচ্ছা হাসপাতাল নির্মানে সকল প্রচেষ্টা সম্পন্ন করার জন্য তার সাথে (নচিকেতার)কোলকাতায় যেতে চায় তাতে তার মত আছে কিনা। ওপার থেকে মুঠো ফোনে সম্মতি জানানোর পরে আজিম, খোকনসহ মোট তিন জন ৯সেপ্টেম্বর শুক্রবার কোলকাতায় গিয়ে পৌছানোর পর শনিবার সকালে …..তার বাড়িতে দেখা করে বিস্তারিত বলেন । তখন ২০১৪সালে বলা একটি হাসপাতাল নির্মানের জন্য একই কথা বলেন। পরে তাকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রন জানালে তাতেও সম্মতি জানান নচিকেতা।
অন্যদিকে রোববার সকালে ঝালকাঠির সন্তান কবি কামিনী রায় ও কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি সংরক্ষণ আন্দোলন পরিষদের সদস্য সচিব আ.ফ আজিম তালুকদারসহ ওই উদ্যমী যুবকরা কোলকাতা থেকে ফিরে ভা-ারিয়ায় আসেন। এসময় আ.ফ. আজিম তালুকদার জানান, তারা বেশ কয়েক কছর ধরে কবি কামিনী রায় ও কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি সংরক্ষণ আন্দোলন পরিষদের ব্যানারে এ দু ব্যক্তির অস্তিত্ব ধরে রাখতে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। ইতো মধ্যে রুপসী বাংলার কবি খ্যাত কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতি সংরক্ষন করতে সক্ষম হয়েছে এবং কবি কামিনী রায়ের স্মৃতি রক্ষার কাজ অব্যাহত আছে। সাথে তারা নচিকেতার বিষয়টি যুক্ত করে চলতি মাসের ৮তারিখ রাতে বাংলাদেশ গিয়ে ১০তারিখে নচিকেতার কোলকাতার দত্তপুকুরের নিজ বাস ভবনে তার সাথে (নচিকেতার ) কথা বলেছে, সেলফি তুলেছে এবং তাকে বাংলাদেশে আসতে বলায় তিনি সম্মতিও জানিয়েছেন। আজিম আরো জানান, দাদার(নচিকেতার) এই ইচ্ছা পুরনে এখানার জমির কাগজপত্র সংগহ করে এই ইচ্ছা পুরনে একটি কমিটি করে ৮/১০দিনের মধ্যে আবার কোলকাতায় দাদার সাথে দেখা করতে যাবো। অন্যদিকে গতকাল রোববার দুপুরে নচিকেতার সাথে মুঠো ফোনে আজিমের কথার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, হ্যা ওরা এসছিল ওদের কথা শুনেছি এবং আমি বলেছি যে বাংলাদেশ সরকার যদি ইচ্ছা করে আমার পূর্ব পুরুষের সম্পত্তিতে একটি সরকারি হাসপাতাল গড়ে তোলে তা হলে ওই এলাকার মানুষ জনের বিশেষ করে গরীব মানুষদের উপকার হবে। আর সরকার এটা করলে আমি ধন্য থাকব।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles