আজ- শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আর্থিক অস্বচ্ছলতার মধ্যে দিনযাপন করছে বেকার সমস্যা সমাধানে কাজ করা উদ্যোক্তারা।

এম এ মুন্নাঃ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই বেকার সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আমাদের দেশের অনেক যুবক ধ্বংসাত্মক কাজে আত্মনিয়োগ করছে, যা কেবল তার নিজের বা পরিবারের জন্য নয়, গোটা সমাজের জন্য হয়ে উঠেছে ভয়ংকর। সেই বেকার সমস্যা সমাধানে কয়েক যুগ ধরে যারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজ অর্থায়নে সরকারের কোন সহযোগীতা ছাড়াই বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল দেশ হিসেবে তৈরি করার লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কারিগরি কোর্স ভিত্তিক কম্পিউটারসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত এই প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে প্রায় কয়েক লক্ষ বেকার ছাত্র-ছাত্রী, যুবক-যুবতীদেরসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের মধ্য থেকে অনেকেই দক্ষ হয়ে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছে আবার অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পেয়েছে। যার ফলে, বাংলাদেশের অনেক বেকার নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছে। এই সকল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বেকার সমস্যা সমাধানে শিক্ষিত/স্বল্পশিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে আত্মনির্ভরশীল তথা আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।


বর্তমানে সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ এক মহামারীর সৃষ্টি করেছে। যার সংক্রমনে বাংলাদেশেও আক্রান্ত হচ্ছে। এই মহামারীতে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১৮ মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। তার সাথে সাথে এই সকল উদ্যোক্তাদের একমাত্র আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে, পরিবার পরিজন নিয়ে তারা অনেক কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এই দূঃসময়ে ঐ সমস্ত উদ্যোক্তাদের নেই কোন আর্থিক সহযোগিতা বা সরকার ঘোষিত প্রনোদনা।
বেসিক ট্রেড ইন্সটিটিউট এ্যাসোসিয়েশনের পিরোজপুর জেলার সভপতি শফিকুল ইসলাম মিলন বলেন, বাংলাদেশে যারা বেকার সমস্যা সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে তারা আজ পথে বসার উপক্রম। দীর্ঘদিন ধরে যারা অসংখ্য বেকারদের কর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তারা আজ ভয়াবহ পরিস্থিতির স্বীকার। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক/স্টাফ রয়েছে তাদের বেতন ও প্রতিষ্ঠানের ভাড়াসহ প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে অনেক খরচ আছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্টাফের বেতন ও ভাড়া যোগান দিতে প্রত্যেকের কষ্ট হয়। এইরকম অবস্থা বেশিদিন চললে এই সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে জেলার হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীরা কম্পিউটারসহ কারিগরি অন্যান্য প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হবে এবং বেকার সমস্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পিরোজপুর শহরের বহুল পরিচিত সফট ইন কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার এর পরিচালক আব্দুর রহিম খান জানান, আমার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত একটি প্রতিষ্ঠান এবং আমি দুই দশকের অধিকাল ধরে পিরোজপুরে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে হাজার হাজার বেকার যুবক-যুবতীকে আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে ও ডিজিটাল সেবা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছি। আমি শুধুমাত্র এই একটি পেশার সাথে জড়িত থাকায় এই প্রতিষ্ঠানটি আমার রুটি-রুজির একমাত্র পথ। করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে গত ১৮ মার্চ থেকে আমার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় খুব অস্বচ্ছলতা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।

বরিশাল বিভাগের সর্ববৃহৎ এবং সবথেকে বেশি শিক্ষার্থী সম্বলিত স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান স্পার্ক কম্পিউটার এর পরিচালক বদরুজ্জামান সুজন বলেন, গত ১৮ মার্চ থেকে আমার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কারনে আমার প্রতিষ্ঠানের স্টাফদের বেতনসহ প্রতিষ্ঠান ভাড়া দিতে আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে। জানিনা সামনের মাস থেকে কিভাবে চলবো। এভাবে বেশি দিন থাকলে পথে বসতে হবে।
নিউ চিপস এ্যান্ড বাইটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির পরিচালক মাহাবুবুল আলম জানান, আমি ও আমার প্রতিষ্ঠানের স্টাফসহ প্রায় অনেকগুলো পরিবার খুব দূরাবস্থার মধ্যে দিনযাপন করছি। বছরের শুরু হওয়ায় আয় তেমন ভাল ছিলনা আর যা কিছু আয় হয়েছিল বোর্ডের নির্দেশ মোতাবেক গত ২৫ মার্চ শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেন ফি বাবদ সব টাকা বোর্ডে জমা দিয়েছি। এখন খুব খারাপ অবস্থায় জীবনযাপন করছি। আমার মত প্রতিষ্ঠান পিরোজপুর জেলায় প্রায় ৫০টি রয়েছে এবং সমগ্র বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মত রয়েছে তাই এই মূহুর্তে সরকারের কাছে একটাই দাবী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের এই খাতে সরকারের কিছু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে আমাদের মত এমন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সবাই দু বেলা দুমুঠো খেয়ে বাঁচতে পারবে। অন্যথায় এই সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাবে।

বিভাগ: জাতীয়,সারাদেশ