আজ- শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ইন্দুরকানীতে নার্সারী করে সফল ইকরামুল শিকদার

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে নার্সারী করে সফলতা পেয়েছেন ইকরামুল শিকদার। রাজনীতির পাশাপাশি নার্সারী পেশাকে আয়ের একমাত্র উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়ে মাত্র ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ২০১৫ সালে ভোরের বেলা নামে ছোট্র পরিসরে একটি নার্সারী শুরু করেন তিনি। প্রথমে তিনি কিছু বনজ ও ফলজ চারা দিয়ে তার নার্সারীর যাত্রা শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে চলতে থাকে তার এ নার্সারী ব্যবসা। এক বন্ধুর পরামর্শে এবং টিভিতে নার্সারীর উপর কৃষি বিষায়ক অনুষ্ঠান দেখে নার্সারী করার আগ্রহ জন্মে তার। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দেশী বিদেশী বিভিন্ন জাতের চারা ও বীজ সংগ্রহ করে তার এ নার্সারীতে। মাত্র পাঁচ বছরেই এ নার্সারী ব্যবসায় সফলতার মুখ দেখতে পাওয়ায় এখন তিনি লাখপতি। ইকরামুলের নার্সারী ব্যবসার সফলতা দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক অনুপ্রাণীত হচ্ছেন এ কাজে।

নার্সারীর মালিক ইকরামুল জানান, বর্তমানে তার দেড় বিঘা জমিতে নার্সারী রয়েছে। এবছর তিনি দশ কাঠা জায়গায় ১০ হাজার নারিকেল চারা, ১০ কাঠা জায়গায় ১৫ হাজার সুপারি চারা এবং বাকি ১০ কাঠা জায়গায় বিভিন্ন বনজ, ফলজ, ঔষধী ও ফুলের চারা রয়েছে। এর মধ্যে এ বছর তিনি তার নার্সারীতে ৫ হাজার নারিকেল ও ১০ হাজার সুপারি চারা বিক্রি করেছেন। তার এখানে ভিয়েতনাম ও বার্মার নারিকেল ও সুপারি চারা রয়েছে। যা মাত্র তিন থেকে সাড়ে ৩ বছরের মধ্যেই ফলন ধরে। এছাড়া বিভিন্ন জাতের বনজ চারা ছাড়াও দেশি বিদেশী জাতের আম, জাম, কাঠাল, পেয়ারা, বেদানা, কমলা, আমড়া,শরুফা, লেবু, জাম্বুরা, সফেদা, মাল্টা, বড়ই, কামরাঙ্গা, মিষ্টি তেতুল, চালতা, লিচু, লকট, বেল, লটকন সহ প্রায় দেড়’শ জাতের ফলের চারা রয়েছে।
আমের জাতের মধ্যে হারিভাঙ্গা, ল্যাঙড়া, আমরুপালি,হিম সাগর, গুটি, ফজলি, গৈৗরমতি,কাঠিমণ,বারি-৪, বেনানা ম্যাঙ্গো সহ প্রায় ২৫টি জাতের চারা রয়েছে।ফুলের মধ্যে থাই গোলাপ, রজনিগন্ধা, চায়না টগর, হাছনাহেনা,বকুল,কৃষচুড়া, বেলি, গন্ধরাজ,জবা, কিসমাস ট্রি,পাতা বহার,ঝাউ গাছ সহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির চারা রয়েছে।
এছাড়া এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছও। রাজধানী ঢাকা, বগুড়া, নোয়াখালী, চিটাগাং, রাজশাহী থেকে এসে এখান থেকে চারা কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন ব্যক্তি। দুরে অনলাইনের মাধ্যমে তিনি চারা বিক্রি করে থাকেন ।
অপরদিকে তিনি ঢাকায় ছাদ বাগানের জন্য এখান থেকে মাটি বিক্রি করে থাকেন। এবছর তিনি ঢাকায় ৩টি ছাদ বাগানের জন্য বস্তা প্রতি ২’শ টাকা করে ২০০ বস্তা মাটি বিক্রির অর্ডার পেয়েছেন।


তিনি আরো জানান, চলতি মৌসুমে সুপারি, নারিকেল,আম ও মাল্টার চারা বিক্রি হচ্ছে। এবছর তিনি এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৫ লাখ টাকার বেশি চারা বিক্রি করেছেন। আরো প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার চারা চলতি মৌসুমে বিক্রি হবে বলে তিনি আশাবাদী। তার এখানে ৫ থেকে ৭ জন কর্মচারি নিয়মিত কাজ করে। উপজেলার ঘোষেরহাট বাজারে এবং তার বাড়িতে এ নার্সারী। চারা বেঁচাকেনার জন্য ঘোষেরহাট বাজারে তার ৪টি প্রদর্শনী কেন্দ্র রয়েছে। এখান থেকে সড়ক ও নৌপথে সহজেই চারা পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি প্রতিবেদককে জানান, নার্সারী ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় তার এ নার্সারীটি আরো বর্ধিত করার জন্য কাজ চলছে। এ নার্সারীটিকে আরো বৃহৎ আকারে করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। তিনি নার্সারী ব্যবসার বাইরেও রাজনীতির পাশাপাশি এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডেও সম্পৃক্ত রয়েছেন।

নার্সারীর নিয়মিত কর্মচারি মিজানুর রহমান এবং হাবিব শিকদার বলেন, এ ই নার্সারীর আমরা নিয়মিত কর্মচারি। এখানে বারো মাস কাজ করে আমাদের সংসার চলে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়রা সিদ্দিকা জানান, নার্সারী একটি লাভজনক ব্যবসা। বেকার যুবকরা নার্সারী করে স্বাবলম্বী হতে পারে।

বিভাগ: অন্যান্য,জাতীয়,টপ নিউজ,বরিশাল বিভাগ,ব্রেকিং নিউজ,সারাদেশ