আজ- শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পিরোজপুরে আইটিতে সফল উদ্যোক্তা এম এ মুন্না

পড়াশোনার পাশাপাশি কর্ম জীবন শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে একটি আইটি ফার্মে কম্পিউটার ট্রেইনার হিসেবে চাকরির মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ ৮ বছরে লাভ-ক্ষতির হিসেব কষে দৃঢ় মনোবল ও অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে এখন একজন সফল উদ্যোক্তা এম এ মুন্না। পিরোজপুরে বেকার সমস্যা সমাধানের লক্ষে আইটিতে যুব সমাজকে দক্ষ করে উদ্যোক্তা তৈরির প্রত্যয় নিয়ে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন “এনসিবি আইটি ইনস্টিটিউট” নামে একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। ৬ বছরের পথচলায় তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠান পিরোজপুরে সকল স্তরের মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এখন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে তাদের কার্যক্রম।

বর্তমানে তিনি সকল ধরনের আইটি সংক্রান্ত সার্ভিস দিয়ে থাকেন। সার্ভিস সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার সলিউশন, প্রমোশন এন্ড বুস্টিং, মোবাইল এপস ডেভেলপমেন্ট, এসএমএস মার্কেটিং, কলার টিউন মেকিংসহ সকল ধরনের বিজ্ঞাপন তৈরি।

এনসিবি আইটির সফলতার গল্প সম্পর্কে এম এ মুন্না জানান, আমার উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল একদম শূন্য হাতে। ২০১৩ সালে যখন আমি পড়াশুনার পাশাপাশি চাকরি শুরু করেছিলাম তখন আমার একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। পারিবারিক সমস্যার কারনে তখন আমার হয় চাকরি, না হয় পরিবার দুইটির একটি বাদ দিতে হবে। তখন একটা বিষয়ই মাথায় কাজ করতো এই পৃথিবীতে নিজের পথ নিজেরই তৈরি করতে হবে, কিছু সংখ্যক পরিবার আছে হয়তো তারা নিজেদের সন্তানদের পথ তৈরি করে দেয় কিন্তু অধিকাংশ মানুষই নিজের পথ নিজে তৈরি করে নেয়। তখন এক ঝাকঁ হতাশা ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ছেড়ে ছিলাম তাই এখন সফল হতে পেরেছি। দীর্ঘ কর্মজীবনে জাতীয় ও আন্তজার্তিক পর্যায়ে প্রায় ৩০ টির বেশি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেকে দক্ষ করে তুলেছি। গত ৮ বছরে প্রায় দশ হাজার শিক্ষর্থীদেরকে আমি এবং আমার প্রতিষ্ঠান দক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা বিভিন্ন আইটি রিলেটেড প্রশিক্ষণ প্রদান করে নিজ জেলা পিরোজপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চাকরির সুযোগ তৈরি করেছি। নিজ জেলার প্রিন্টিং প্রেস থেকে শুরু করে সরকারী বেসরকারী অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনবল হিসেবে স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে অনেক বেকারদের কাজের সুযোগ তৈরি করতে সহায়তা করেছি। দেশ বিদেশে অসংখ্য নিউজ পোর্টাল, ইকমার্স ও প্রতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট তৈরি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যারসহ ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিস দিয়েছি। নিজ জেলার অসংখ্য বেকারদের ফ্রিল্যান্সার, ইউটিউবার, ব্লগার ও অনলাইন-অফলাইনে উদ্যোক্তা তৈরি করেছি। আমার এই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও “নিউ চিপস এন্ড বাইটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি” নামে বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ড থেকে অনুমোদনকৃত একটি মানস্মত কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। তাছাড়া “ফ্লোরেন্স নার্সিং ভর্তি কোচিং” নামে আমার একটি নার্সিং ভর্তি কোচিং রয়েছে। নার্সিং কোচিং থেকে প্রত্যেক বছর অসংখ্য ছাত্রছাত্রী সরকারিভাবে নার্সিং কলেজে চান্স পাচ্ছে। এছাড়াও ইউটিউব চ্যানেল ও ওয়েবসাইট মনিটাইজেশন করে সেখানেও একটি ইনকামের সুযোগ তৈরি করেছি।

এম এ মুন্না বেকারদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিজের গোল সেট করে কেউ যদি কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে সে সফল হবেই। ইচ্ছে থাকলে একটি ফেসবুক পেজ থেকে শুরু করে বড় উদ্যোক্তা হওয়া যায় যদি তার কাজের প্রতি ভালবাসা থাকে। পিরোজপুর ইয়ুথ সোসাইটিসহ শহরের কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে মানুষের সেবায় গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করছেন।

টিআইবি পিরোজপুরের সনাক সভাপতি এ্যাডভোকেট শহিদুল্লাহ জানান, পিরোজপুরে এরকম অনেক উদ্যোক্তা তাদের নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। সরকারের উচিত তাদেরকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া। অনেকই করোনার কারনে হতাশ এসকল উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে লোন দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠান রক্ষায় সাহায্য করা উচিত।

জেলা প্রশাসক আবু আলী মো: সাজ্জাদ হোসেন জানান, উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার সব সময়ই কাজ করে যাচ্ছে। আমরা পিরোজপুর জেলাতে ছোট বড় অনেক উদ্যোক্তা রয়েছে। আমরা উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি। বিসিকের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়াও বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে লোনের ব্যবস্থা চালু আছে। উদ্যোক্তাদের যে কোন সমস্যায় আমরা তাদের পাশে আছি।

 

বিভাগ: অন্যান্য,জাতীয়,টপ নিউজ,তথ্য প্রযুক্তি,ফিচার,বরিশাল বিভাগ,ব্রেকিং নিউজ,মিডিয়া,লাইফ স্টাইল,শিক্ষাঙ্গন,সারাদেশ