আজ- শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যে কাজগুলো কখনই ফেসবুকে করা উচিৎ নয়।

ডিজিটাল যুগে সবচেয়ে বড় যোগযোগ মাধ্যম হলো ফেসবুক। বর্তমান যুগে ফেসবুক আইডি নেই এমন মানুষ পাওয়া খুব দূর্লভ ব্যাপার। ফেসবুক এখন আমাদের জীবনের একটি অঙ্গ হয়ে দাড়িয়েছে।

ফেসবুক, টুইটার, গুগল, পিন্টারেস্ট সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ তাদের জীবনের বিভিন্ন অনুসঙ্গ প্রকাশ করেন। সেজন্য এই মাধ্যমগুলো সবার সাথে যোগাযোগ ও তথ্য শেয়ারের অমূল্য হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

ফেসবুকে যেমন কিছু ভাল দিক রয়েছে তেমনি রয়েছে কিছু খারাপ দিক। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারে কিছু কিছু বিষয় না করাই ভালো। আমরা যেমন রাতের বেলা কালো সানগ্লাস ব্যাবহার করি না কিংবা কালো প্যান্টের সাথে লাল মোজা পড়ি না। ঠিক তেমনি ফেসবুকে কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো আপনার করা উচিৎ হবে না।

আজকে এমন কয়েকটি বিষয় আমরা এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করব যা আপনি কখনই ফেসবুকে করবেন না।

০১. উগ্রপন্থী কোন লেখালেখি করাঃ  আমরা প্রায়শই দেখি, অনেকেই উগ্রপন্থীদের নিয়ে লেখালেখি করে। কেউ তাদের পক্ষে থাকে আবার কেউবা বিপক্ষে । আমাদের সবসময় মনে রাখা উচিৎ একটা উগ্রপন্থী স্ট্যাটাস একটা জাতির জন্য হুমকি স্বরুপ।

০২.  উস্কানিমূলক স্ট্যাটাস দেয়াঃ আমরা অনেক সময় বুঝে না বুঝে অনেক কিছু করে ফেলি । ফেসবুকের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়। ফেসবুকে না বুঝে আমরা অনেক সময় অনেক স্ট্যাটাস দিয়ে থাকি। কিন্তু স্ট্যাটাস দেয়ার সময় আমাদের মনে রাখা জরুরী আমরা কিসের উপর ভিত্তি করে লেখালেখি করছি। অনেক সময় আমরা এমন স্ট্যাটাস দিয়ে থাকি যা কোন ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান, দেশ বা জাতির জন্য হুমকি স্বরুপ। স্ট্যাটাস দেয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে  হবে। যেন কোন ব্যাক্তি, দেশ বা জাতিকে নিয়ে উস্কানিমুলক লেখা না থাকে।

০৩. ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে অপঃপ্রচারঃ অনেক সময় দেখা যায় কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের মনোমালিন্য হলে আমরা সেই ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখি করি। সেই লেখালেখি করার সময় আমাদের মনে রাখতে হবে। যে এমন কোন তথ্য আমরা সেখানে উল্লেখ করব না যে তথ্যের সুনির্দিষ্ট কোন ভিত্তি নেই।

০৪. বিব্রতকর ছবিতে কখনই কোনও বন্ধুকে ট্যাগ করাঃ বিব্রতকর অবস্থায় আমরা জীবনে সবাই পড়ি? সবাইকেই কম বেশি পড়তে হয়। একটা সময় ছিল,যখন আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়লেও তেমন কোন মানুষ জানত না। কিন্তু এখন অনলাইন যুগ। তাই কোন ঘটনা ঘটার আগেই অনলাইনে পাওয়া যায়। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। মনে করেন, আপনি  কোনও একটা পার্টিতে গিয়েছেন। হয়তো আপনার একজন বন্ধু কখনই ড্রিংক করেন না ; কিন্তু সেদিন দুষ্টামির ছলে একটা গ্লাস হাতে তুলে নিলেন। আপনি হঠাৎ তার ছবি তুলে নিলেন। তারপর ফেসবুকে আপলোড করে বন্ধুটিকে ট্যাগ করলেন ।  তখন সেটা দেখতে পেলো তার পরিবার এবং আরো অনেকেই। কোনও বন্ধুকে এভাবে বিব্রত করা ঠিক না।

 

০৫. ধর্ম নিয়ে বিদ্রুপ মন্তব্য ছড়ানোঃ প্রতে্যক ধর্মের উপর শ্রদ্ধাশীল হওয়া আমাদের প্রতিটা মানুষের নৈতিক দায়িত্ব । অন্য ধর্মকে ছোট করার জন্য সেই ধর্মের কোন বিষয় নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করা  ঠিক না। লেখালেখি করলে যেমনি সেই ধর্মের মানুষগুলো কষ্ট পায় তেমনি সহিংসতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

০৬. না বুঝে কোন কিছু শেয়ার করাঃ কোন কিছু শেয়ার করার আগে একবার চিন্তা করুন। আপনি যে বিষয়টি শেয়ার করছেন এর সত্যতা কতটুকু। কারন, আপনার একটি শেয়ার এর জন্য অনেকেই এই পোস্টটি পড়বে। অনেক সময় কিছু পোস্টে মানুষকে গুজব ছড়ানো হয়। তাই শেয়ার করার আগে একবার চিন্তা করুন।

০৭.  প্রতিনিয়ত দুঃখের স্ট্যাটাস দেওয়াঃ কিছু কিছু মানুষ আছে,তাদের স্ট্যাটাস পড়লে মনে হবে। তাদের কাছে প্রতিটা দিনই যেন একটি খারাপ দিন। সব সময় তারা অনেক দুঃখ কষ্টের মধ্যে থাকে। দুঃখের বা কষ্টের স্ট্যাটাসগুলো হয়তো খুব মন খারাপ কিংবা হতাশা নিয়ে লেখা হয়েছে। কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকুন যে, আপনার এই স্ট্যাটাস নিয়ে কেউ না কেউ আবার হাসাহাসি করছে। কারন, আপনার কষ্টের দাম তাদের কাছে নেই। তাই এই ধরনের স্ট্যাটাস থেকে বিরত থাকুন।

০৮. মানুষকে মাত্রারিক্ত গেম/কুইজ/গ্রুপ রিকোয়েস্ট পাঠানোঃ ফেসবুকে অন্যদেরকে আপনার পছন্দের গেম কিংবা কুইজ অথবা কোনও গ্রুপে যোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ পাঠানো খুবই সাধারন একটি বিষয়। তবে, এটা কখনই মাত্রারিক্ত করবেন না। কাউকে বারবার এসব অনুরোধ পাঠালে সে বিরক্ত বোধ করতে পারে। বারবার এসব অনুরোধ পাঠানো,আর বাস্তবে তার মুখের উপর  ঘ্যানর ঘ্যানর করার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। তাই নিজেকে সেই বিরক্তকর পরিস্থিতে ফেলা ঠিক নয়।

০৯. নিজের পাসওয়ার্ড  অন্যকে শেয়ার  করাঃ ফেসবুকের পাসওয়ার্ড কারো সাথে শেয়ার করা ঠিক না। আজকে যার সাথে আপনি শেয়ার করছেন। আগামী দিন হয়তো তার সাথে সম্পর্ক ভাল থাকবে না। তখন সে আপনার ক্ষতি করতে পারে। তাই অন্য কারো সাথে পাসওয়ার্ড শেয়ার করবেন না।

১০. নিজের পার্সোনল ছবি অন্যকে শেয়ার করাঃ  ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব তৈরি হয়। অনেক সময় বন্ধু থেকে খুব কাছের মানুষ হয়ে ওঠে। তবে কাছের মানুষ হলেও তাদের সাথে পার্সোনাল ছবি শেয়ার না করা ভাল। আজকের কাছের মানুষ আগামী দিনের শত্রু হতে কত সময়। তাই কারো সাথে ছবি শেয়ার করবেন না।

১১. বিভিন্ন লিংকে না বুঝে প্রবেশ করাঃ ফেসবুকে অনেক সময় আমরা অনেক লিংক দেখতে পেয়ে থাকি। সেখানে লেখা থাকে ’আপনার ভবিষ্যৎ নায়িকা কে হবে দেখতে হলে নিচের লিংকে প্রবেশ করুন’। এরকম অনেক লিংক হ্যাকাররা তৈরি করে। আপনি যদি কখনও সেই লিংকে ক্লিক করেন। তাহলে আইডি হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই লিংকে ক্লিক করার আগে অবশ্যই বুঝে নিতে হবে।

এছাড়াও আরো কিছু নিয়ম আপনাদের অনুসরন করতে হবে। তাহলে ফেসবুকে আপনার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। অনেকের প্রশ্ন হতে পারে এতো নিষেধাজ্ঞা দিলে তো আর ফেসবুক ব্যাবহার করতে হবেনা, ফেসবুকে  গিয়ে মশা মারতে হবে। মনে রাখবেন আপনার ফেসবুক প্রোফাইল এর প্রতিটা কাজ আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। তাই এমন কিছু করুন যা দেখে বা পড়ে মানুষ এর ভাল লাগবে ।

 

বিভাগ: অন্যান্য,লাইফস্টাইল