আজ- বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নেছারাবাদের ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট অতিরিক্ত খাজনায় ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ

বর্ষা মৌসুমে নেছারাবাদ উপজেলার আটঘরে জলে ডাঙায় জমে উঠছে নৌকার হাট। প্রায় শত বছর ধরে উপজেলার আটঘরের মানপাশা বাজার সংলগ্ন খালে ও রাস্তার উপরে বসা এ নৌকার হাট এখন এ অঞ্চলে একটা ঐতিহ্য পরিণত হয়েছে। কিন্তু প্রতি বছর এ হাটের ইজারা মূল্যবৃদ্ধি ও ইজারাদারদের অতিরিক্ত খাজনা আদায়ে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে ব্যবসায়িরা। ব্যবসায়িদের দাবী হাটে খাজনার মূল্য কমানোসহ হাটে নৌকা বিকিনির স্বাভাবিক পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে হাটে ব্যবসার কোন ভাটা আসবেনা বলে মনে করেন তারা। তবে ইজারাদাররা দাবী করেন, তারা একশ টাকায় নয় টাকা খাজনা নিচ্ছেন। কোন অতিরিক্ত খাজনা নিচ্ছেননা।
জানাগেছে,বংশ-পরম্পরায় এ উপজেলার ছয়টি গ্রামের প্রায় দেড় হাজারের বেশি পরিবার নৌকা ও বৈঠা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। সপ্তাহে প্রতি শুক্র ও সোমবার বসে এ হাট।
99সরেজমিনে গত শুক্রবার হাটে গিয়ে দেখা যায়, খালে ও রাস্তার দু‘ধারে কেবল নৌকা আর বৈঠা। মেহগনি,চাম্বল,কড়াই ও রেইনট্রি গাছ দিয়ে তৈরী এ নৌকা দেখতে স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ি আর উৎসুক মানুষের ভীড়। যে দিকে চোখ পড়ে কেবল সারিবদ্ধ বিভিন্ন সাইজের নৌকা আর নৌকা। কাঠ ও আকারভেদে একেক নৌকার একেক দাম।
চাম্বল কাঠ দিয়ে তৈরী একটি আটহাতি সাইজের নৌকা বিক্রি হয় ১৮শ থেকে দু‘হাজার ২শ টাকায়। এছাড়া ৯,১০ ও ১২ হাত সাইজ পর্যন্ত বাহারি ডিজাইনের নৌকা আসে এখানে। ব্যবসায়ীরা হাটে এসে ঘুরে ঘুরে দর দাম করে একসাথে অনেকগুলো নৌকা কিনেন। নৌকার উপর নৌকা সাজিয়ে নসিমন,ভ্যানগাড়ী ও ট্রলারে করে তারা নিয়ে যান দূর-দূরান্তে।
পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বে আটঘর খাল। বর্ষা মৌসুমে এই খালসহ সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সরাগম হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী এ হাট। বর্ষা মৌসুমে পেয়ারা পাড়া, মাছা মারা, গো খাদ্য সংগ্রহ, নার্সারি কাজ সহ যাতায়াতের জন্য বিকিকিনি হয় এ নৌকা। তবে বাংলার আপেলখ্যাত কুড়িয়ানার মিষ্টি পেয়ারা,আমড়া ও চাঁই(দোহার) দিয়ে মাছ সংগ্রহের জন্য নৌকাগুলো বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। তাই নৌকা তৈরী এ অঞ্চলের মানুষের কাছে একটা শিল্প হয়ে পরিনত।
ইলুহার গ্রাম থেকে আসা নৌকা ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি ২৫ বছর ধরে এ হাটে একসাথে অনেকগুলো নৌকা নিয়ে আসেন। একসময় হাটে ধুমধাম বেচা-বিক্রি চলত। এখন আর আগের মত চলেনা। কাঠপাটের মূল্য বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত খাজনায় ক্রেতারা কম আসে।

বিনয়কাঠি থেকে আসা নৌকা ক্রেতা জামাল মিয়া বলেন, তিনি হাটে তিনটি নৌকা কিনতে আসছেন। কিন্তু শতকে ১১টাকা খাজনা ও নৌকার অনেক দাম থাকায় আর কিনবেন না। পরের হাটে এসে আর একটি নৌকা কেনার চেষ্টা করবেন।
নৌকার সাথে বৈঠা দেয়া হয়না বলে নৌকার পাশাপাশি বিক্রি হয় বৈঠাও। তাই খালের পাশে রাস্তার উপরে বসে বৈঠার পশরা। আমইর,গুলাপ,মেহগনি,রেইনট্রি কাঠ তৈরী এক একটি বৈঠা ৮০ টাকা থেকে শুরু করে চারশ টাকা দামে বিক্রি হয়ে থাকে।

ব্যবসায়ীদের দাবী যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ ঐতিহ্যবাহী হাটকে পর্যটন শিল্পে করতে সরকারি বেসরকারি উদ্যেগের পাশাপাশি ইজারা মূল্য কমানো হয়।

বিভাগ: অন্যান্য,জাতীয়,ফিচার,বরিশাল বিভাগ,সারাদেশ