পিরোজপুরে ফিল্মি স্টাইলে ছাত্রলীগ নেতাকে শর্টগান ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া সেই ব্যক্তির ভিডিও ফুটেজ দেখে অবশেষে তার নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। ব্যাক্তিটি হলেন আজগর আলী বিশ্বাস ওরফে তারা বিশ্বাস। খুলনা মহানগরের হরিণটানা থানার রায়েরমহল রোডের বাসিন্দা মোঃ হারেজ বিশ্বাসের ছেলে তিনি। বিশ্বাস প্রোপার্টিজের মালিক ও বিশ্বাস গ্রুপের সিইও। খুলনার রিয়েল এস্টেট হাউজিং বিজনেস সোসাইটির (রিহ্যাবস) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। ভিন্ন মতাদর্শের হলেও ২০২১ সালের জানুয়ারিতে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নিজেকে সদস্য হিসেবে ঠাঁই করে নেন।
গত ১১ জুলাই বিকেলে পিরোজপুর শহর থেকে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন আজগর বিশ্বাস। সে সময় শহরের পিটিআই মোড়ে গাড়িটি ধাক্কা দেয় ছাত্রলীগের পিরোজপুর পৌরসভা কমিটির সভাপতি আসিফ ইকবালকে। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে নতুন বাস স্ট্যান্ড সংলঘœ পানির ট্যাংকির নিকট গিয়ে গাড়িটির গতিরোধ করেন এবং গাড়ির চালককে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই চালক গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির পেছন থেকে একটি শর্টগান বের করে তার দিকে তেড়ে আসেন। কাছে এসে কোনো কথা বলার আগেই শর্টগান লোড করে তার বুকে ঠেকিয়ে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন তিনি। পরে তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন ও পথচারীরা এগিয়ে এলে অস্ত্রধারী ব্যক্তি গাড়িতে ওঠে দ্রুত খুলনার দিকে চলে যান। এ পুরো ঘটনার ভিডিওটি পাশের একটি দোকানের সিসি ক্যামেরার রেকর্ড হয়।পরবর্তিতে ঘটনাটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ পিরোজপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ছাত্রলীগ নেতা আসিফ।
বিষয়টি নিয়ে মিডিয়াসহ প্রশাসনিক মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ জ মো. মাসুদুজ্জামান জানান, থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে ছাত্রলীগ নেতা আসিফ ইকবাল। বিষয়টি আমরা বিভিন্ন প্রশাসনিক টিমকে অবহিত করেছি।
আসিফ ইকবাল জানান, তারা বিশ্বাস নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। একটি লাইসেন্স করা অস্ত্র রাখা হয় মূলত নিজের রক্ষার জন্য। কিন্তু উনি তো হুমকি দেওয়ার জন্য অস্ত্র বের করেছেন। যিনি এভাবে অস্ত্র ব্যবহার করেন, তার অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। আমি দলের খুলনার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তার বিরুদ্ধে জমি দখলসহ অনেক অভিযোগ আছে। আমি দল থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানাব।
ছাত্রলীগ নেতা আসিফ বলেন, তারা বিশ্বাস এখন আমাকে ফোন করে এক দলের লোক বলে ক্ষমা চান। আমি তাকে কোনভাবেই ক্ষমা করব না। তার যদি প্রশাসনিকভাবে ২/১ দিনের মধ্যে বিচার না হয়, তাহলে পৌর ছাত্রলীগের অধীনে মানববন্ধনসহ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।
আজগর বিশ্বাস তারা বলেন, ওই দিন আমি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে গাড়ি চালিয়ে খুলনা ফিরছিলাম। এ সময় পিরোজপুর শহরের পিটিআই এলাকায় ৪টি মোটর সাইকেলে করে কয়েক যুবক আমার গতি রোধ করেন। এতে আমি ভয়ে গাড়ি থেকে নেমে আত্মরক্ষার্থে সঙ্গে থাকা অস্ত্র বের করে লোড করি। তবে কারো বুকে ঠেকানোর অভিযোগ মিথ্যা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আজগর বিশ্বাস তারা খুলনায় বেশ প্রভাবশালী। মূলত জমি কেনাবেঁচা করেন। জড়িত সরকারদলীয় রাজনীতিতেও। যে কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিলেও থানা পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। তার নামে একাধিক মামলা ও জিডি রয়েছে।
