আজ- শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত পিরোজপুরের সোবাহান মঞ্জিল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিধন্য পিরোজপুর শহরের হাসপাতাল সড়কের সোবাহান মঞ্জিল আজো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে। মুজিববষের্র দিন গননার শুরু থেকেই পথচারীরা অপলক নেত্রে তাকিয়ে থাকে হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী ইতিহাসের রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত এই ভবনটির দিকে।

আব্দুস সোবাহানের দৌহিত্র পিরোজপুর পৌরসভার কাউন্সিলর সাদুল্লাহ লিটন জানান,   ১৯৫৪, ১৯৫৬ এবং ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু পিরোজপুরে এসে মহাকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী আব্দুস সোবাহানের বাড়িতে অবস্থান করেছেন এবং এ বাড়িতে বসেই কর্মীসভায় বক্তব্য দিয়েছেন। পিরোজপুর শহরে জনসভায় ভাষণ দিয়ে আবার এ বাড়িতেই ফিরে এসে রাত্রিযাপন করেছেন।

পিরোজপুরের এ ভবনটি বঙ্গবন্ধু প্রেমিকদের কাছে এক ঐতিহাসিক ভবনে পরিণত হয়েছে। ১৯৭০ সালে এ ভবনে বসে তিনি বলেছিলেন ৬ দফা হচ্ছে স্বাধীনতার সনদ, বাঙ্গালীদের মুক্তির সনদ। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পূর্বে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে, ১৯৫৬ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী হয়ে এবং ১৯৭০ সালে শেরেবাংলার পুত্র এ কে ফায়জুল হককে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধু পিরোজপুরে এসে এই সোবাহান মঞ্জিলে অবস্থান করেন।

১৯৪৬ সালে ঐতিহাসিক নির্বাচনে গনতন্রের মানষ পুত্র জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মনোনীত প্রার্থী হিসাবে আমার দাদা বিশিষ্ট আইনজীবি,পিরোজপুর আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম আঃছোবাহান পিরোজপুর সদরে এম পি প্রার্থী,দক্ষিণ অঞ্চলে তখন আলাদা একটা গুরুত্ব থাকায় কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের জি এস, ছাত্র ফেডারেশন এর নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি বহর নিয়ে পিরোজপুর আসেন,নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে ২১দিন আমাদের বাড়িতে অবস্হান করেন,দক্ষিণ জনপদে সকল এলাকায় সফর করে নির্বাচনী জনসভা করেন,গনতন্ত্রের মানষ পুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব ও গুরুত্বপূর্ণ জনসভা গুলিতে অংশগ্রহণ করেন,তখনকার সময় উল্লেখযোগ্য দুটি ঘটনা ঘটে পাড়েরহাট ও ভান্ডারিয়া জনসভা সফল করতে গিয়ে যেমন পাড়েরহাটে বড় ধরনের গন্ডগোল হয় সেখানে বঙ্গবন্ধু সামনে থেকে গন্ডগোল সামাল দিতে গিয়ে কম বেশী আহত হন পরবর্তীতে জনসভা শেষে তারা পাড়েরহাটে নুরু খানের বাড়িতে কর্মী দের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক করেন।ভান্ডারিয়া তখন প্রার্থী ছিলেন মরহুম আফতাব উদ্দিন আহমেদ (পিরোজপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান,৯নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মেজর জিয়াউদ্দিনের পিতা)সেখানেও গনতন্ত্রের মানষ পুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও(ছাত্রনেতা) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনসভা করেন সেই থেকে এই জনপদে মুখে মুখে একটা কথা প্রচলিত হয় ভান্ডারিয়া মানে কুফা নগর…..সকল নির্বাচনি কর্মকাণ্ড শেষে এই শ্বেত পাথরের ডাইনিং টেবিলে আপ্যায়ন করা হতো আমাদের বাড়িতে

১৯৫৪ এবং ১৯৫৬ সালে বঙ্গবন্ধুর পিরোজপুর সফরকালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুস সোবাহান এবং সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদীন, বদিউল আলম চৌধূরী, আজিজুর রহমান সিকদার, সফিজউদ্দিন আহম্মেদ, ডাঃ আমোদ রঞ্জন গুহ সহ মহকুমা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সার্বক্ষণিক বঙ্গবন্ধুর সাথে থাকতেন। ১৯৭০ সালে ৭ এবং ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্থান জাতীয় পরিষদ এবং পূর্ব পাকিস্থান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাতে পিরোজপুরে এসে বঙ্গবন্ধু এ ভবনটিতেই অবস্থান করেছেন।

পিরোজপুর শহরের টাউন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এক বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ইনশাল্লাহ এই নির্বাচনে আপনাদের সমর্থনে আমরা বিজয়ী হবো আর আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি ৬ দফার দাড়ি-কমা-সেমিকোলনও পরিবর্তন করা হবে না।
৬ দফা আদায় করে ছাড়বো। জনসভায় আসার পূর্বে এই সোবাহান মঞ্জিলে প্রবেশের সময় বাড়ির লোকজন বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানায় এবং প্রয়াত আব্দুস সোবাহানের কনিষ্ঠ পুত্র এডভোকেট সলিমুল্লাহ ৬টি তারা খচিত একটি নৌকা বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন- বঙ্গবন্ধু পাকিস্থানীরা ৬ দফা না মানলে কি করবেন? বঙ্গবন্ধু মুচকি হেসে বলেছিলেন- সলিম স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রস্তুত হও।

পৌরসভার কাউন্সিলর সাদুল্লাহ লিটন আরো জানান, বঙ্গবন্ধু যে টেবিলে ভাত খেতেন সে টেবিলটি এখনো অক্ষত আছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত পিরোজপুর শহরের হাসপাতাল সড়কের এই দ্বিতল ভবনটি পথচারিদের মহান নেতার স্মৃতির পরশ দেয়।

মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত এই ভবনটিতে বঙ্গবন্ধুর নানা স্মৃতিচারণ ও মুজিববর্ষে উদযাপন উপলক্ষে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছে বছর ব্যাপী নানা আয়োজন সহ ১৭ মার্চ রাতে মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানের জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ সহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

বিভাগ: অন্যান্য,জাতীয়,টপ নিউজ,বরিশাল বিভাগ,ব্রেকিং নিউজ,রাজনীতি,সারাদেশ