আজ- সোমবার, ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ সম্পর্কে মঠবাড়িয়া সার্কেল মোহাম্মদ ইব্রাহীম এর লেখনী

আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চের ভাষণে বাংলার রাখাল রাজা, মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর একটি মাত্র তর্জনীর উত্থান পুরো একটি জ্যান্ত পাকিস্তান-কে করেছিল দ্বিখন্ডিত। আমরা পেয়েছিলাম আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। হিমালয়ের উচ্চতা পরিমাপ করা হয়েছে; প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতা ও নির্ণয় করা হয়েছে। কিন্তু আকাশের বিস্তৃতির মত বঙ্গবন্ধুর বিশালত্ব কোন শব্দের মায়াজালে কিংবা কোন বাক্যের অবয়বে,জ্যামিতিক মানদন্ডে কিংবা গাণিতিক যুক্তির নিরীখে পরিমাপন সম্ভব নয়। কারণ, বাংলা, বাঙালি, বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু একসূত্রে গ্রোথিত, প্রোথিত।

আজকের এবং ভবিষ্যতের অনাগত শিশুদেরকে মনে রাখতে হবে আমাদের ছোট্ট খোকা শিশু মুজিব তাঁর মুখের খাবার বিলিয়ে দিতেন নিরন্ন শিশুদের মুখে, তাঁর গায়ের জামা খুলে দিতেন বস্ত্রহীন ছিন্নমূল শিশুদের গায়ে। আজকের কিশোরদের মনে রাখতে হবে-কিশোর মুজিব গোপালগঞ্জে শেরে-বাংলা এ.কে ফজলুল হকের পথরুদ্ধ করেছিলেন স্কুলের হোস্টেলের সংস্কার কাজের জন্য। আজকের ছাত্র-ছাত্রী ভাইবোনদের মনে রাখতে হবে ছাত্র মুজিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছত্র থাকাকালীন ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনে শামিল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার হয়েছিলেন।

যুবক ভাইদের মনে রাখতে হবে যুবক মুজিব তাঁর যৌবনের ৪,৬৮২ টা দিন এই বাংলাদেশ বিনির্মাণের অপরাধে কারাগারে বন্দি ছিলেন। যিনি জেলখানার সামনে ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী হিসেবে বন্দি হয়ে মাটি কপালে মুছে বলেছিলেন “এ মাটি আমি তোমাকে ভালবাসি। যদি আমার মৃত্যু হয়, আমি যেন তোমার কোলে ঠাঁই নিতে পারি।” পাকিস্তানের কারাগারে জেলের মধ্যে সেল, সেলের সামনে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ও তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন, “এই কবরে না, আমার লাশটি আমার বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিও। যে বাংলার মাটিতে আমি লালিত-পালিত, যে বাংলার আকাশে-বাতাসে বর্ধিত, সেই বাংলার মাটিতে আমি চিরনিদ্রায় শায়িত থাকতে চাই।” আজ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মনে রাখতে হবে-নেতা মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে ফাঁসির মঞ্চ বেছে নিয়েছিলেন।

৭ই মার্চের ভাষণে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাইনা।” আধুনিক রাষ্ট্রনায়কদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই শাসক মুজিব দেশ স্বাধীন হবার মাত্র ১ বছরের মধ্যে আমাদেরকে উপহার দিয়েছিলেন বিশ্বনন্দিত একটি শাসনতন্ত্র-আমাদের পবিত্র সংবিধান। যে শাসনতন্ত্রে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; যেখানে কৃষক-শ্রমিক মুক্তির কথা বলা আছে; যেখানে নারী অধিকারের কথা; সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপের কথা বলা আছে। পার্শ্ববর্তী বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের শাসনতন্ত্রে ১৯৭৬ সালে ধর্মনিরপেক্ষতার (Secularism) বিষয়টি সংযোজন করা হয়। যেটি বঙ্গবন্ধু করেছিলেন ১৯৭২ সালে। বঙ্গবন্ধু এমন এক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন যিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে ১১ হাজার কোটি টাকার ধ্বংসস্তুপের মধ্যে থেকে আমাদেরকে ১৪ হাজার কোটি টাকার এক পজিটিভ বাংলাদেশ এক সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দিয়ে গেছেন।

এ যুগের হাইব্রীড নেতাদের মনে রাখতে হবে-বঙ্গবন্ধু স্রোতের অনুকূলে ভেসে আসা কচুরিপানা নন, বরং স্রোতের বিপরীতে দাঁড়ানো এক সাহসী নেতা। তিনি প্রতিবাদ করতে জানতেন, সংগ্রাম করতে জানতেন, মুখ ফুটে “না” উচ্চারণ করতে জানতেন, মানুষের কাতারে দাঁড়িয়ে মানুষের মতাদর্শের জন্য যুদ্ধ করতে জানতেন, রক্তাক্ত হতে জানতেন। দেশ আজ যতদূর পৌঁছানোর কথা তা সম্ভব হয়নি। বারবার সামরিক হস্তক্ষেপ ও সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ছোবলের কারণে হোঁচট খেয়েছে। ফলে একটু গণতন্ত্র, একটু সামরিকতন্ত্র মিলে গোঁজামিলতন্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে। এ গোঁজামিলতন্ত্রের হাত ধরে দেশে লুটপাটতন্ত্র ও দলতন্ত্র চালু হয়। দুর্নীতির কলঙ্ক, জঙ্গিবাদের আতঙ্ক, মাদকের বিষবাষ্প, দলবাজির অভিযোগ, দারিদ্রের লজ্জা-এ থেকে আজ দেশ উদ্ধারের শপথ যুবসমাজকেই নিতে হবে।

তবে আশার কথা বঙ্গবন্ধু তনয়া মানবতার মা দেশরত্ন শেখ হাসিনা ৩ মেয়াদে একটানা প্রায় ১৩ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে দেশের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। দেশে আজ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশ জাতি সংঘের এলডিজি ভুক্ত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে দারিদ্রের দুষ্টচক্র থেকে থেকে উন্নয়নশীল (Developiog) দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে এমডিজি, এসডিজি এর সকল চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আমরা একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছি রূপকল্প ২০৪১ এর দিকে। বঙ্গবন্ধুর সেই অমর বানী “আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবানা”-তা আজ বাস্তবিক অর্থে সুপ্রতিষ্ঠিত।

লেখকঃ মোহাম্মদ ইব্রাহীম,

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মঠবাড়িয়া সার্কেল,

পিরোজপুর।

বিভাগ: অন্যান্য,জাতীয়,টপ নিউজ,ফিচার,বরিশাল বিভাগ,ব্রেকিং নিউজ,মিডিয়া,লাইফ স্টাইল,শিক্ষাঙ্গন,সারাদেশ